Navigation
Recent News

পূজামণ্ডপে আদিম গুহা



আদিম গুহা
অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে দুর্গাপ্রতিমাকে। মন্দিরজুড়ে জ্বলছে রংবেরঙের আলো। প্রতিমার সামনে চলছে পূজা-অর্চনা ও আরতি। নারী ও শিশুসহ পুণ্যার্থীরা আসছেন দলে দলে। প্রতিমার সামনে ভিড় করছেন। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষের ভিড় জমে মন্দির চত্বরে, যেখানে কাগজ আর বাঁশের কাঠামোতে তৈরি করা হয়েছে আদিম গুহা।
তুলে ধরা হয়েছে হাজার বছরের পুরোনো মানবসভ্যতার এক খণ্ড মনোহর চিত্র।
এই দৃশ্য দেখা যায় গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া হিন্দুপাড়া বটতলা পূজামণ্ডপে গিয়ে। বগুড়া আর্ট কলেজের একদল হিন্দু-মুসলিম শিক্ষার্থী মনের মাধুরী মিশিয়ে এই মানব গুহানির্মাণ করেন। এ জন্য তাঁরা কোনো পারিশ্রমিকও নেননি।
আর্ট কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ব্যতিক্রমী রূপ দিতেই ভিন্ন কিছু করার ভাবনা তাঁদের মাথায় আসে। এর সঙ্গে যোগ হয় অধুনা বিলুপ্ত জাদুঘর কারুপল্লী। সেখানে একটি অংশে আদিম মানুষের আজব গুহা তৈরি করে বগুড়ার চিত্রশিল্পী আমিনুল করিম ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু তিন-চার বছর আগে ওই কারুপল্লী ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু প্রয়াত এই শিল্পী আজও তাঁদের অনুপ্রেরণা জোগান। এ কারণেই সেই কারুপল্লীর আদলে তাঁরা প্রাচীন মানবসভ্যতার চিত্র তুলে ধরতে সচেষ্ট হন।
ঠনঠনিয়া হিন্দুপাড়ার এই কালীমন্দিরে তিন বছর ধরে দুর্গোসবের আয়োজন করছে স্থানীয় মহালয় যুব সংঘ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার দাস প্রথম আলোকেবলেন, ‘দুর্গাপূজাকে স্মরণীয় করতে প্রতিবছরই বিখ্যাত শিল্পীর হাতে তৈরি প্রতিমা সংগ্রহ করি। এ ছাড়া উসবে নতুন কিছু মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করি। আমাদের এই  যুব সংঘের বেশির ভাগ সদস্যই ছাত্র। শারদীয় উসব ঘনিয়ে এলে, সবাই মিলে প্রস্তুতি বৈঠক করি। এবারের বৈঠকে আর্ট কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী আদিম গুহা তৈরির প্রস্তাব দেন। দেবীর প্রতি ভক্তি আর শিল্পী আমিনুল করিমের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা থেকেই আমরা এ ব্যাপারে একমত হই।
আদিম মানুষের এই গুহা তৈরির অন্যতম উদ্যোক্তা বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র সোহাগ কুমার বলেন, যেই ভাবনা, সেই কাজ। এর পেছনে তিনটি উদ্দেশ্য ছিল, নতুন এই পূজামণ্ডপকে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা, সেই সঙ্গে হাজার বছরের মানবসভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরা এবং বিলুপ্ত বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী কারুপল্লীকে নব প্রাণ দেওয়া।  প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পুরোনো পত্রিকা ও বাঁশের কাঠামোতে রং স্প্রে করে নির্মাণ করা হয় এই আদিম গুহা।
ঠনঠনিয়া ব্যাংকপাড়ার জুয়েল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘শারদীয় দুর্গোসব বরাবরই হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির প্রতীক। তাই মণ্ডপে আসি। প্রতিমা দেখি। কিন্তু এর আগে কখনো কোনো মণ্ডপে আদিম সভ্যতা ফুটিয়ে তুলতে দেখিনি। আদিম এই গুহা দেখে সত্যিই মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। খুব ভালো লেগেছে।

Share

Post A Comment:

0 comments: